অতিরিক্ত চুল পড়া সমস্যার ঘরোয়া সমাধান

- আপডেট সময় : 02:41:54 am, Friday, 25 October 2024 52 বার পড়া হয়েছে
মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের অন্যতম একটি উপাদান হচ্ছে মাথার চুল। কিন্তু অল্প বয়সের অনেকেরই মাথায় টাক পড়ে যাওয়ায় ভোগেন খুবই অস্বস্তিরিতে। নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। যদি দ্রুত এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে নিচে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং উপায় গুলি অবলম্বন করুন।
বর্তমানে দেশে অল্প বয়সী পুরুষ এবং নারী উভয়ের চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে অবশ্য প্রাকৃতিক কারণও কিছুটা দায়ী। অতিরিক্ত ধুলাবালি, বায়ু দূষণ, ভেজাল খাদ্য ইত্যাদির কারণে মাথার চুল অকালে চলে যায়। দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ টা চুল ঝরে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কারণ ঠিক একই পরিমাণে নতুন চুল গজায় আমাদের শরীরে। কিন্তু ঝড়ে যাওয়ার হার যদি অনেক বেশি হয় এবং গজানোর হার যদি একদমই কম হয় তাহলে সেখানে বাধে বিপত্তি।
অনেকেই আবার চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অবলম্বন করেন নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী এবং হারবাল ওষুধ। কেউ কেউ তো বিদেশ থেকে দামি দামি প্রোডাক্ট নিয়েও ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আপনি কি কখনো নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায় গুলি অবলম্বন করেছেন? এটিও অনেক বেশি কার্যকরী।
কিভাবে বুঝবেন যে আপনার মাথার চুল পড়া অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে?
• যখন দেখবেন মাথার ত্বকের সামনের অংশের চুলের ঘনত্বের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে তখন ধরে নেবেন খুব শীঘ্রই চুলের পরিমাণ কমতে চলেছে।
• প্রতিদিন ১০০ টা পর্যন্ত চুল ঝরে পরা স্বাভাবিক কিন্তু এর বেশি হলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
• মাথার চুলের পাশাপাশি ভ্রু কিংবা চোখের পাতার চুলও যদি ঝরে পড়তে থাকে তাহলে অবশ্যই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে।
• মাথার ত্বকের খুশকি পরিমাণ অত্যাধিক বেড়ে গেলে অবশ্যই চুল ঝরার সমস্যা বাড়বে।
নতুন চুল গজানোর ঘরোয়া উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় গুলি শুধু জানলে হবে না বরং দৈনন্দিন জীবনে সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
ঘি এবং অলিভ অয়েলের ব্যবহার
রূপচর্চায় ঘি এবং অলিভ অয়েল ২ টি উপাদান এই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এজন্য একটি পাত্রে দুই টেবিল চামচ করে ঘি এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রনটিকে চুলায় হালকা আঁচে গরম করে কিছুটা ঠান্ডা করে নিন। কারণ মাথায় কোনভাবেই গরম তেল লাগানো যাবে না।
মাথায় ভালোভাবে ম্যাসাজ করার পর কিছুক্ষণ সেভাবেই রেখে দিন। বিশেষ করে মাথার যে অংশ গুলো হতে বেশি চুল ঝরে পড়ছে সেগুলো অংশে ভালোভাবে মেসেজ করুন। এভাবে ৩০ মিনিটের মতো রেখে শ্যাম্পু করে ধরে ফেলুন।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে এই পদ্ধতিটি খুবই কার্যকরী। কারণ খাঁটি ঘি এর মধ্য রয়েছে নানা রকমের ভিটামিন। এছাড়াও অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব উপাদান গুলো আমাদের মাথার ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারী। যার কারণে মাথার রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং চুলের গোড়া আরো বেশি শক্ত হয়।
কালোজিরা, মেথি ও নারিকেল তেল
চুলের যত্নে মেথি এবং নারিকেল তেলের অবদান আজকের নতুন কিছু নয়। কিছু পরিমাণে নারিকেল তেলের সাথে মেথি এবং কালোজিরা গুঁড়ো করে মিশিয়ে নি। তারপর সেটিকে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এই তেলটি একটি কাঁচের বোতলে সংরক্ষণ করুন। কারণ কাঁচের বোতলে এটি অন্তত ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে।
সপ্তাহে অন্তত ২ থেকে ৩ বার এই তেলটি ব্যবহার করুন। সেই সাথে মাথার যে অংশ থেকে চুল বেশি ঝরে পড়ছে সেখানে ভিটামিন ই ক্যাপসুল লাগিয়ে দিন। নতুন চুল গজানোর এই উপায়টি অবলম্বন করলে কয়েক মাসের ভিতরে আপনি খুব ভালো ফল পাবেন।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায় হিসেবে নিম পাতার রস
নানা ধরনের অসুখ-বিসুখের চিকিৎসায় নিম পাতার উপকারিতার কথা আমাদের সবারই জানা রয়েছে। প্রাকৃতিক এই ওষুধি গুণ সম্পন্ন পাতাটি চুল গজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সাথে আমাদের চুলের গোড়াকে অনেক বেশি শক্ত করে পাশাপাশি খুশকি ও দূর হয়ে যায়।
এজন্য কিছু পরিমাণে নিমপাতা কে ভালো করে ধুয়ে নিন তারপরে ব্লেন্ডারের অথবা বেটে পেস্ট করে নিন। সেই পেস্ট গুলো সরাসরি মাথার থেকে ব্যবহার করতে পারবেন। অথবা চাইলে রস বের করে নিতেও পারেন। তারপর আধা ঘন্টা রাখার পরে মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে বেশ কয়েকবার এভাবে নিম পাতা ব্যবহার করুন। কয়েক মাসের ভেতরেই আপনার নতুন চুল গজাতে শুরু করবে।
নিম পাতা ব্যবহারের আরও একটি উপায় রয়েছে। প্রথমে কিছু সংখ্যক নিম পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। তারপর সেই পানি ঠান্ডা হলে পাতা গুলো সরিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র পানিটি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা
আশা করি নতুন চুল গজানোর উপায় সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন। প্রাকৃতিক এবং যেকোনো ধরনের ঘরোয়া উপায় আমাদের স্বাস্থ্য ও রূপচর্চার জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। অনেকেই চুল পড়া বন্ধ করতে নানা রকম হারবাল এবং প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো না ব্যবহার করাই ভালো। আর যদি কোন ভাবেই আপনার সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে যত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।