কোর্ট ম্যারেজ কিংবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কি কি লাগে

Mohammad Raihan Uddin
  • আপডেট সময় : 02:37:01 pm, Thursday, 5 December 2024 39 বার পড়া হয়েছে

কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কি কি লাগে

দুই পক্ষের পরিবারের মতে বিয়ে না করাই সবচাইতে ভালো। তবুও উঠতি বয়সে এবং অনেক তরুণ তরুণীরা জানতে চায় কাজেই অফিসে বিয়ে করতে কি কি লাগে। বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী ও পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকার বৈধতা পায়। তবে পরিবারের অনুমতি না পাওয়ায় অনেকেই নিজেরাই কিংবা লুকিয়ে এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

কাজী অফিসে বিয়ের সম্পন্ন করা যায় আবার কোর্ট ম্যারেজও করা যায়। একত্রে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করা হয় সেটাকে বলা হয় কোর্ট ম্যারেজ। তবে শুধুমাত্র কোর্ট ম্যারেজের আইনগত ভিত্তি নেই। এর জন্য অবশ্যই কাজী অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই ধরনের কোর্ট ম্যারাজে পরবর্তীতে যদি একপক্ষ অন্যপক্ষকে ত্যাগ করে তাহলে কোন ধরনের আইনি সমাধান পাবেন না।

কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটর কার্যালয়ে হলফ নামা করতে হয়। এটি শুধুমাত্র একটি হলফ নামা বা ঘোষণা পত্র। বিয়ের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অবশ্যই আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং আকদ সম্পন্ন করতে হবে।

অনেকই আবেগের বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুমাত্র এফিডেফেট করেই বিয়ের সম্পন্ন করে। কারণ কাজী অফিসে গেলে খরচের পরিমাণটা বেশি হয়। তাইতো তারা কোর্ট ম্যারেজকে সবচাইতে ভালো উপায় মনে করে। তবে যদি কাবিন রেজিস্ট্রেশন না হয় তাহলে একজন নারী তার প্রাপ্য মোহরানা আদায় করতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। এমনকি পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা অনেক কঠিন হয়ে থাকে।

আপনি তখনই কোর্ট ম্যারেজ করতে পারেন কিংবা কোর্টে যাবেন যখন আপনার কাজের মাধ্যমে বিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবেন।

কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কি কি প্রয়োজন হয়

প্রথমেই আপনার যেটি প্রয়োজন হবে সেটি হচ্ছে আইন অনুযায়ী ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বয়স ঠিক আছে কিনা। আপনি নিশ্চয়ই জানেন বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স হচ্ছে ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স হচ্ছে ২১। যদি বয়সের বিষয়টা ঠিক থাকে তাহলে নিম্নোক্ত কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।

১। উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র
২। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে এসএসসি পাশের সনদ
৩। জন্ম নিবন্ধনপত্র
৪। উভয়ের পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি করে ছবি
৫। একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা

উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো থাকলে আপনি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের সম্পন্ন করতে পারবেন। আশা করি কাজী অফিসে বিয়ে করতে কি কি লাগবে সে সম্পর্কে আপনারা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কত টাকা খরচ হয়

কাবিনের খরচ সকল বইয়ের ক্ষেত্রে একই রকম। দেনমোহরের টাকার পরিমাণ উপর ভিত্তি করে একটি ফি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি হাজার বার তার অংশবিশেষের জন্য ফি দিতে হয় ১৪ টাকা। রেজিস্ট্রেশন ফি ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তবে দেনমোহরের রেজিস্ট্রেশনের ফি এর পরিমাণ কোনভাবেই ২০০ টাকার কম হবে না।

যেমন কারো দেন মোহরের পরিমাণ যদি ১০ লক্ষ টাকা হয় তাহলে প্রথম ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি হবে ১৪ টাকা। সে হিসাবে কাবিনের খরচের পরিমাণ ৭ হাজার টাকা। আবার পরবর্তী প্রতি লাখের জন্য বিয়ের পরিমাণ হবে ২০০ টাকা করে। সে হিসেবে পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকার জন্য ফি ১০০০ টাকা। তাহলে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনের জন্য সর্বমোট ফি ৮ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফ্রি ৯ হাজার টাকা।

এভাবে কাজী অফিসে গিয়ে কাবিন করতে ১০ লক্ষ টাকায় খরচ হবে মাত্র ৯ হাজার টাকা।

তবে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সকল ফি পরিশোধ করে সাধারণত বরপক্ষের লোকেরা। অনেক সময় সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।

হিন্দু আইনে বিয়ে করার নিয়ম কি

হিন্দু ছেলে মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের প্রথা মেনে যেতে হবে। এ ব্যাপারে সবচাইতে ভালো একজন উকিলই আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবে।

তবে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্য সবচাইতে ভালো হচ্ছে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা। কারণ বিয়ের মাধ্যমে একজন ছেলে ও মেয়ে সামাজিকভাবে একসাথে থাকার অনুমতি পায়। পরিবার গঠন এবং সন্তান জন্মদানের অন্যতম পদ্ধতি এটি। মুসলমানদের জন্য এভাবে গোপনে বিয়ে করা একদমই অনুচিত। আশা করি বিয়ে করতে কি কি লাগে এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী আপনারা জানতে পেরেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

কোর্ট ম্যারেজ কিংবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কি কি লাগে

আপডেট সময় : 02:37:01 pm, Thursday, 5 December 2024

দুই পক্ষের পরিবারের মতে বিয়ে না করাই সবচাইতে ভালো। তবুও উঠতি বয়সে এবং অনেক তরুণ তরুণীরা জানতে চায় কাজেই অফিসে বিয়ে করতে কি কি লাগে। বিয়ের মাধ্যমে একজন নারী ও পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকার বৈধতা পায়। তবে পরিবারের অনুমতি না পাওয়ায় অনেকেই নিজেরাই কিংবা লুকিয়ে এই ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

কাজী অফিসে বিয়ের সম্পন্ন করা যায় আবার কোর্ট ম্যারেজও করা যায়। একত্রে স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করার অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে যে হলফনামা সম্পাদন করা হয় সেটাকে বলা হয় কোর্ট ম্যারেজ। তবে শুধুমাত্র কোর্ট ম্যারেজের আইনগত ভিত্তি নেই। এর জন্য অবশ্যই কাজী অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই ধরনের কোর্ট ম্যারাজে পরবর্তীতে যদি একপক্ষ অন্যপক্ষকে ত্যাগ করে তাহলে কোন ধরনের আইনি সমাধান পাবেন না।

কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য একটি নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটর কার্যালয়ে হলফ নামা করতে হয়। এটি শুধুমাত্র একটি হলফ নামা বা ঘোষণা পত্র। বিয়ের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অবশ্যই আইন অনুযায়ী কাবিন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং আকদ সম্পন্ন করতে হবে।

অনেকই আবেগের বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে শুধুমাত্র এফিডেফেট করেই বিয়ের সম্পন্ন করে। কারণ কাজী অফিসে গেলে খরচের পরিমাণটা বেশি হয়। তাইতো তারা কোর্ট ম্যারেজকে সবচাইতে ভালো উপায় মনে করে। তবে যদি কাবিন রেজিস্ট্রেশন না হয় তাহলে একজন নারী তার প্রাপ্য মোহরানা আদায় করতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়। এমনকি পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা অনেক কঠিন হয়ে থাকে।

আপনি তখনই কোর্ট ম্যারেজ করতে পারেন কিংবা কোর্টে যাবেন যখন আপনার কাজের মাধ্যমে বিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবেন।

কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কি কি প্রয়োজন হয়

প্রথমেই আপনার যেটি প্রয়োজন হবে সেটি হচ্ছে আইন অনুযায়ী ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বয়স ঠিক আছে কিনা। আপনি নিশ্চয়ই জানেন বাংলাদেশের মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স হচ্ছে ১৮ এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স হচ্ছে ২১। যদি বয়সের বিষয়টা ঠিক থাকে তাহলে নিম্নোক্ত কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।

১। উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র
২। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে এসএসসি পাশের সনদ
৩। জন্ম নিবন্ধনপত্র
৪। উভয়ের পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি করে ছবি
৫। একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা

উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো থাকলে আপনি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ের সম্পন্ন করতে পারবেন। আশা করি কাজী অফিসে বিয়ে করতে কি কি লাগবে সে সম্পর্কে আপনারা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।

কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করতে কত টাকা খরচ হয়

কাবিনের খরচ সকল বইয়ের ক্ষেত্রে একই রকম। দেনমোহরের টাকার পরিমাণ উপর ভিত্তি করে একটি ফি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে প্রতি হাজার বার তার অংশবিশেষের জন্য ফি দিতে হয় ১৪ টাকা। রেজিস্ট্রেশন ফি ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রযোজ্য হয়ে থাকে। তবে দেনমোহরের রেজিস্ট্রেশনের ফি এর পরিমাণ কোনভাবেই ২০০ টাকার কম হবে না।

যেমন কারো দেন মোহরের পরিমাণ যদি ১০ লক্ষ টাকা হয় তাহলে প্রথম ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি হবে ১৪ টাকা। সে হিসাবে কাবিনের খরচের পরিমাণ ৭ হাজার টাকা। আবার পরবর্তী প্রতি লাখের জন্য বিয়ের পরিমাণ হবে ২০০ টাকা করে। সে হিসেবে পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকার জন্য ফি ১০০০ টাকা। তাহলে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনের জন্য সর্বমোট ফি ৮ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফ্রি ৯ হাজার টাকা।

এভাবে কাজী অফিসে গিয়ে কাবিন করতে ১০ লক্ষ টাকায় খরচ হবে মাত্র ৯ হাজার টাকা।

তবে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সকল ফি পরিশোধ করে সাধারণত বরপক্ষের লোকেরা। অনেক সময় সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই ফি পরিবর্তন করা হয়ে থাকে।

হিন্দু আইনে বিয়ে করার নিয়ম কি

হিন্দু ছেলে মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের প্রথা মেনে যেতে হবে। এ ব্যাপারে সবচাইতে ভালো একজন উকিলই আপনাকে পরামর্শ দিতে পারবে।

তবে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্য সবচাইতে ভালো হচ্ছে পারিবারিক সম্মতিতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা। কারণ বিয়ের মাধ্যমে একজন ছেলে ও মেয়ে সামাজিকভাবে একসাথে থাকার অনুমতি পায়। পরিবার গঠন এবং সন্তান জন্মদানের অন্যতম পদ্ধতি এটি। মুসলমানদের জন্য এভাবে গোপনে বিয়ে করা একদমই অনুচিত। আশা করি বিয়ে করতে কি কি লাগে এবং এ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাবলী আপনারা জানতে পেরেছেন।