হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
- আপডেট সময় : 06:07:14 am, Tuesday, 26 November 2024 22 বার পড়া হয়েছে
মানুষের হার্ট অ্যাটাক যেকোনো কারণেই হতে পারে। এর লক্ষণ গুলো বুঝে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করতে পারলে পরবর্তীতে বিপদ বাড়তে পারে। যার কারণে আগে থেকে বিভিন্ন ধরনের সচেতনতা এবং এ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরী।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন জেনে নেই হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে কি কি করণীয়।
হার্ট অ্যাটাক কি এবং কেন হয়
আমাদের হৃদযন্ত্র সারা দেহে রক্ত পরিবহন প্রক্রিয়ায় পাম্প হিসেবে কাজ করে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের পেশির বহুল অঙ্গ-সাচল রাখতেও এই রক্ত প্রবাহ অত্যাবশ্যক।
আমাদের হার্টের মোট ৪ টি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। যে প্রকোষ্ঠ গুলি মূলত সারা দেহ থেকে ডিঅক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদপিণ্ডে এনে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সারা শরীরে সরবরাহ করে। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করি সেটা রক্তের মিশ্রিত করে আবার সারা শরীরে প্রবাহিত করাই হার্টের কাজ। আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান বইতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত পড়েছি।
হৃদপিণ্ড নিজেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য করোনারি ধমনীর মাধ্যমে এটি অক্সিজেনযুক্ত রক্ত গ্রহণ করে। এর আবার তিনটি আর্টারব রয়েছে। যদি কোন কারনে এ সকল আর্টারি বা ধমনীতে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে হ্রদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি হয়। আর এ রক্ত প্রবাহ যদি সম্পূর্ণরূপে ব্লক হয়ে যায় তাহলে আমরা তাকে বলে থাকি হার্ট অ্যাটাক।
কাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি বেশি
বংশগত বা জেনেটিক কারনেও হ্রদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। তবে এর আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে:
• অতিরিক্ত ধূমপান এবং অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করা
• অতিরিক্ত ডায়াবেটিস এবং হাই ব্লাড প্রেসার
• অতিরিক্ত ওজন এবং শারীরিক স্থূলতা
• অনেক সময় কম ওজনে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা চর্বি জমে গেলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
• শারীরিক পরিশ্রম না করা এবং সারাদিন অলস জীবন যাপন করা
এছাড়া অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও আমাদের হৃদরোগের জন্য দায়ী।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলো কি কি
• বুকে ব্যথা হওয়া হার্ট এটাকের প্রধান লক্ষণ। আমাদের বুকের মাঝখানে মুষ্টিবদ্ধ হাত রাখলে যে জায়গাটুকু পাওয়া যায় সেটাকে বলা হয় রেট্রোস্টার্নাল পেইন। এ জায়গায় যদি ভেতর থেকে ব্যথা হয় তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।
• বুকের ব্যথা অনেক সময় ঘাড় এবং চোয়াল, পেটেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
• অনেক ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার পরিমাণ বেশি হলে শ্বাসকষ্টের সাথে কাশি হতে পারে।
• রক্তচাপ একদম কমে গিয়ে ঘাম হতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
• এছাড়া বুক ধরফর করা এবং বমি বমি ভাব হওয়া হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম।
হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিকভাবে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন
চিকিৎসকরা সবসময় বলে থাকেন এই ধরনের লক্ষণ গুলি দেখা দিলে অত্যন্ত জরুরিভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনে বাংলাদেশের জরুরি সেবা অর্থাৎ ৯৯৯ এ কল দেওয়া যেতে পারে।
আর লক্ষ্য রাখতে হবে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী কোনভাবেই যেন বেশি নড়াচড়া না করে। শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে যতটা শান্ত থাকা যায় ততটাই রোগীর জন্য ভালো। আরো আগেই যদি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কিংবা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তাহলে সিপিআর দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই দক্ষ কারও সাহায্য নিতে হবে।
অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক হলে পালস রেট একদমই কমে যায়। এ সময় রিফ্লেক্স পাওয়ার জন্য কাশি দেওয়া যেতে পারে। এতে করে রক্তচাপ কিছুটা বৃদ্ধি পায় এবং হার্টের রেটও বৃদ্ধি পেয়ে যায়। পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
তবে ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন, ইসিজি, ব্লাড টেস্ট, এনজিওগ্রাম ইত্যাদি করার পর মেডিসিন এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য বলবেন। আর যদি হার্টে ব্লক দেখা যায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে রিং পরানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারেরা। কারণ হার্টের ভেতর রক্তনালীর ব্লক দূর করাটা এ সময় খুবই প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ।
হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি
যদিও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখন সকল ধরনের অসুখ বিসুখেরই ট্রিটমেন্ট করানো সম্ভব। তবুও এই ধরনের রোগ যাতে আমাদের শরীরে বাসা না বাধে তার জন্য সচেতন হওয়া জরুরী।
যদি কারো প্রেশার, গ্যাস্ট্রিক, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ইত্যাদি থাকে তাহলে খাদ্যাভাস খুবই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাঝে মাঝে হার্ট সুস্থ আছে কিনা সেটি জানার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে পারেন
সকালে এবং বিকালে নিয়মিত অন্তত ৪০ থেকে ৫০ মিনিট করে হাটা ডায়াবেটিস এবং হার্টের জন্য খুবই ভালো। তাছাড়া ধুমপান, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত চা কফি ইত্যাদির কারণে আমাদের শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। যাদের কিনা অতিরিক্ত ওজন আছে তাদের যতটুকু সম্ভব ওজন কমানো উচিত। তা না হলে হার্টের সমস্যার পাশাপাশি হাই ব্লাড প্রেশার, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা হয়ে যেতে পারে।
আর যাদের কিনা পরিবারে ইতিমধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস রয়েছে তাদের ২০ বছর বয়সের পর থেকেই মাঝে মাঝে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাটের চেকআপ করানো দরকার। সেই সাথে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ গুলি আপনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কেউ জানিয়ে রাখুন। যাতে করে জরুরী যে কোন পরিপ্রেক্ষিতে তারা সঠিক পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারে।
বোতলের পানি কি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়? জানতে এখানে প্রবেশ করুন।