সরকার কি চাইলে টাকা ছাপাতে পারে
- আপডেট সময় : 10:44:12 am, Friday, 6 December 2024 20 বার পড়া হয়েছে
টাকা কিংবা অর্থ ছাড়া আমাদের জীবন একেবারেই অচল। সারা দুনিয়ার সকল মানুষের অবিরাম ছুটে চলার পেছনে একমাত্র কারণ হচ্ছে অনেক অর্থ উপার্জন করা। বলা যেতে পারে এটি ছাড়া আমাদের জীবন মূল্যহীন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে টাকা ছাপানোর নিয়ম কি?
কোন দেশের সরকার চাইলেই কি টাকা চাপাতে পারে। এই ধরনের প্রশ্ন আমাদের মনের মধ্যে প্রায়ই ঘুরপাক খায়। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু টাকা ছাপানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় তাই যেকোন প্রয়োজনে তারা বেশি বেশি টাকা কে যেন মুদ্রণ করে না। বেশি বেশি টাকা ছাপিয়ে সেগুলো মানুষের মাধ্যমে বন্টন করলে কিংবা বড় বড় স্থাপনা তৈরি করলে অথবা বাইরে দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের করলেই তো দেশে কোন অভাব থাকবে না।
কিন্তু সরকারের কাছে টাকা ছাপানোর মেশিন থাকা সত্ত্বেও এটি ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যায় না। টাকা উৎপাদন করা নির্দিষ্ট কোন নিয়ম না থাকলেও ছাপানোর বেশকিছু নিয়মনীতি রয়েছে।
টাকা ছাপানোর নিয়ম কি
সব সময় অর্থনীতির সাথে ভারসাম্য রেখে বিনিময় মুদ্রা ছাপানো হয়ে থাকে। একটি দেশের সরকার চাইলেই কাগজের মুদ্রা প্রিন্ট করতে পারে। তবে হিসাব কিংবা নিয়মের বাইরে যত বেশি মুদ্রা ছাপানো হবে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা তত খারাপ হতে শুরু করবে। কারণ এতে করে সঞ্চয়ের মান কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হতে পারে।
ধরুন আপনি ব্যাংকের ৫ লক্ষ টাকা রাখলেন। বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকায় জমি পাওয়া যায় ৫ কাঠা। কিন্তু ৫ বছর পরে ৫ কাঠা জমির দাম হয়ে গেল ৮ লক্ষ টাকা। কিন্তু আপনার ব্যাংকের ৫ লক্ষ টাকা আর বৃদ্ধি পেল না। তারমানে আপনার টাকার মান কমেছে। অর্থনীতিতে এই ধরনের সমস্যাকে বলা হয় মুদ্রাস্ফীতি। কোন দেশের সরকার যদি নিয়মের বহির্ভূত কিংবা অর্থনীতির সাথে ভারসাম্য বজায় না রেখে ইচ্ছেমতো টাকা ছাপায় তাহলে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।
যার কারণে আপনি যতই টাকা উপার্জন করেন না কেন ব্যায়ের সাথে কখনোই ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবেন না।
দেশের অভ্যন্তরে যত বেশি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে, কলকারখানা স্থাপিত হবে, বৈদেশিক আয় হবে দেশের অর্থনীতি ততো বেশি শক্তিশালী হবে।
সরকার চাইলেই কি ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারে
এর এক কথায় উত্তর হচ্ছে সরকার চাইলেই টাকা ছাপাতে পারে না। কারণ এই প্রক্রিয়াটি বেশ দীর্ঘতর। সকল ধরনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন নেয়ার পরেও টাকা নতুন করে বাজারে ছাড়তে অন্ততপক্ষে সময় লাগে ১০ মাস। আবার টাকা ছাপানোর পর নগদ নোটের একটি অংশ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। বাজারে যখন টাকা চাহিদা পড়ে তখন এই মজুদ থেকে বাজারে নোট গুলো ছাড়া হয়ে থাকে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সিদ্ধান্ত নেয় টাকা ছাপানোর তখন এর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার দরকার হয়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কালি, কাগজ ইত্যাদি সরঞ্জাম। এমন কি টেন্ডারও আহবান করতে হয়। কাগজ আসে অন্য দেশ থেকে। যেটি বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। সকল প্রক্রিয়া শেষে নোট ছাপানোর পর তা একটি বন্ধ করে বিশেষ ব্যবস্থা শুকানো হয়।
নোট শুকানোর পর সেটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় যাচাই করা হয়। ছাপানোর পর এই নোটগুলো শুকাতে সময় লাগে অন্তত ৩ থেকে ৭ দিন।
মানব সভ্যতার শুরু থেকেই পণ্যের বিনিময়ের সাথে সাথে মুদ্রার প্রচলন শুরু হলো। প্রথম থেকে স্বর্ণ এবং রূৌপ্যমুদ্রার প্রচলন ছিল। সেখান থেকে আস্তে আস্তে শুরু হয় ধাতব এবং কাগজের নোট। কোন সরকার যদি তার গ্যারান্টির বিপরীতে অনেক বেশি মুদ্রা ছাপায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতির উপরে অনেক চাপ পড়ে।
তবে বর্তমানে ধাতব এবং কাগজের নোটের পাশাপাশি ক্রিপ্টো কারেন্সি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এগুলো ব্যবহার করা হয়। আবার ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অনেক লেনদেনই এখন এই ধরনের ধাতব এবং কাগজের নোট ছাড়াই করা যায়। আশা করি আপনারা টাকা ছাপানোর নিয়ম এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করতে পেরেছেন।